বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী থেকে এম কে রানাঃ একদিকে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে কাজও করতে পারছে না করোনার কারণে। সরকারি চাল ছাড়া পাচ্ছে না অন্য কোনো সাহায্য সহযোগিতা। এ কারণে কুয়াকাটার জেলে পল্লীর মানুষগুলো দিন কাটাচ্ছে চরম কষ্টে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জেলায় মোট ৬৯ হাজার ৯৬০ জন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ৫৩ হাজার ৭১৯ জন নিবন্ধিত ও ষোল হাজার ২৪১ জন অনিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর, কুয়াকাটা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালীর সাগর পাড়ে ১৫ থেকে বিশ হাজার সাগরে মাছধরা জেলে রয়েছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, পটুয়াখালী জেলার ৬৯ হাজার ৬০ জন জেলের মধ্যে প্রায় ৪৬ হাজার জেলে ভিজিএফ এর বিশেষ চাল পান। বাকিদের এ সাহায্যের আওতায় আনতে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তবে এর তালিকা অনেক আগে তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় যেমন প্রকৃত মৎস্যজীবী নেই তেমনি অনেক সাগরে মাছধরা প্রকৃত মৎস্যজীবীদের নাম বাদ পড়েছে। ইতোমধ্যে ওই তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে।
আরও পড়ুনঃ করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু নারীর দাফনের ব্যবস্থা করলেন মানবতার ফেরীওয়ালা হাফিজ
কুয়াকাটা সহ স্থানীয় এসব জেলেদের অধিকাংশই মহাজনদের কাছ থেকে দাদন(ঋণ) ও উচ্চ সুদে টাকা এনেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী এ সব দাদন(ঋণ) ও সুদের টাকাও পরিশোধ করতে হবে। সংসারের ব্যায়ভার বহন ও দাদন ও সুদের টাকা শোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অধিকাংশ জেলে। আয়-রোজগারহীনভাবে দীর্ঘদিন বেকার সময় কাটানোর ফলে অনেকের ঘরের চুলায় এখন আগুন জ্বলছে না। এ অবস্থায় উপকূলীয় জেলে পল্লীগুলোতে চলছে চরম হাহাকার।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছরের একটি নির্দিষ্ট সময় সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারের ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সরকার। এ বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিনের অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।
কুয়াকাটায় ”আঁশার আলো” জেলে সমিতির সম্পাদক মোসারেফ মৃধা বলেন, মৎস্য বিভাগ ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আগ থেকেই করোনার কারণে উপকূলীয় এলাকায় সাগরে মাছ ধরা প্রায় বন্ধ ছিল। করোনার প্রভাবে গত ২৬ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় বরফ সংকট ও মাছ চালান দিতে না পাড়ায় অনেক জেলেই মাছ ধরতে যাননি। এরপর আবার লকডাউন শিথিল হলেও মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলে আসে। এতে মাস তিনেক ধরে ইলিশ শিকার ধরা বন্ধ রয়েছে উপকূলের জেলেদের। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না তারা। তিনি আরও জানান, এখন গ্রামেও অন্য কোনো কাজ নেই করোনার কারণে। বিগত বছরগুলোতে সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও জেলেরা এলাকায় দিনমজুরি বা অন্য কোনো কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন করোনার কারণে তাদের ঘরে বসে বেকার দিন কাটাতে হচ্ছে। আর বিকল্প কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এছাড়া মাছের ব্যবসার জন্য মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া দাদনের(ঋণ) টাকা কিভাবে শোধ করবেন তা নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এসব জেলেরা। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় অনেকে ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরছে। আবার কিছু জেলে আটক হচ্ছে জরিমানাও দিচ্ছে তাতেও থেমে নেই । এদিকে আমরা সরকারের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকে সাধুবাদ জানিয়ে বসে আছি অন্যদিকে ভারতীয় জেলেরা আমাদের সমুদ্রসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে,এতে কতটা উপকার হবে জানিনা।
আরও পড়ুনঃ করোনার মধ্যেও রাতে কাঁদাপানি পেরিয়ে বাল্যবিয়ে! বন্ধ করলেন ইউএনও
কিছু মৎস্যজীবি বলেন, উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে মৎস্যজীবীদের সংখ্যা বেশী হলেও তালিকাভুক্ত সামান্য। এরআগে, তালিকা করার সময় সুবিধা নিতে সরকারী দলের অনেকের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। কখন ও কিভাবে এর তালিকা করা হয় তা প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জানানো হয় না। কিভাবে সংসার চালাই আপনিই দেখেন, সরকারী চাল জেলে কার্ড থাকতেও মাঝে মধ্যে চাল দেয়না। কিভাবে সংসার চলে আল্লাই জানে। শুধু চাল দিয়েই কি সংসার চালানো যায়, বলেন স্বামী বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ টাকার অভাবে চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছি না, কি করবো আপনারাই বলেন বলে আরেক জেলের বউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এদিকে টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা কষ্টে জীবনযাপন করলেও বেশিরভাগই নিজেদের মাছ ধরার নৌকা ও জাল মেরামত করে সময় পার করেছেন।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply